হৈস্থমুথন কি আসলেই কমিয়ে দেয় আপনার উচ্চতা? জানুন সত্য




হৈস্থমুথন কি আসলেই কমিয়ে দেয় আপনার উচ্চতা? জানুন সত্য

আপনি কি জানেন, শারীরিক উচ্চতা একজন মানুষের শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক? এটি সামাজিক এবং মানসিক জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উচ্চতার সাথে সম্পর্কিত অনেক মিথ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে হাইস্টামুথন বা মাথা নত করার ফলে উচ্চতা কমে যাওয়া। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই ধারণাটি নিয়ে আলোচনা করবো এবং জানবো, সত্যিই কি হাইস্টামুথন আপনার উচ্চতা কমিয়ে দেয়?

হৈস্থমুথন বা মাথা নত করার প্রভাব

হৈস্থমুথন (Hunching) শব্দটি এমন এক শারীরিক অবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে এক ব্যক্তি তার কাঁধ, পিঠ এবং মেরুদণ্ডের উপরের অংশ নিচে নামিয়ে রাখে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে একটি অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গিতে বসে থাকা, দাঁড়িয়ে থাকা অথবা কাজ করার ফলে হয়ে থাকে। মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যখন সঠিকভাবে সমান্তরাল থাকে না, তখন সেই শরীরিক অবস্থাকে হাইস্টামুথন বলা হয়।

এটি মূলত মেরুদণ্ডের ভঙ্গুরতা ও কুঁজো হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরিচিত। তবে অনেকের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, হাইস্টামুথন তাদের উচ্চতা কমিয়ে ফেলতে পারে। তাহলে, আসলেই কি হাইস্টামুথন আপনার উচ্চতা কমিয়ে দেয়?

হৈস্থমুথন এবং উচ্চতার সম্পর্ক

অস্বাস্থ্যকর বা ভুল ভঙ্গিতে দীর্ঘ সময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে, যা মেরুদণ্ডের স্তম্ভগুলির মধ্যে কোণ তৈরি করতে পারে। এই অবস্থায় মেরুদণ্ডের সোজাসুজি (spine alignment) পরিবর্তিত হতে পারে, যা কিছু সময়ের জন্য শরীরের উচ্চতাকে সামান্য কমিয়ে দিতে পারে। তবে, এটি স্থায়ীভাবে উচ্চতাকে প্রভাবিত করে না।

কেন হৈস্থমুথন উচ্চতা কমানোর কারণ নয়?

১. মেরুদণ্ডের পুনঃসংস্থাপন: হাইস্টামুথন বা মাথা নিচু করার ফলে, আমাদের মেরুদণ্ডের কিছু অংশ সাময়িকভাবে চাপ অনুভব করতে পারে। এই চাপের কারণে শরীরের উচ্চতা সামান্য কম হতে পারে। তবে, এটি একটি সাময়িক প্রভাব। সঠিক ভঙ্গি বা স্ট্যান্ডিং পজিশন ফিরে পেলে, মেরুদণ্ড আবার তার সঠিক অবস্থানে ফিরে যায় এবং উচ্চতা পুনরুদ্ধার হয়।

২. বয়সের সাথে উচ্চতা কমে যাওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া: যখন আপনি বয়সে প্রবীণ হতে থাকেন, তখন মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলির মধ্যে কিছু পরিবর্তন হতে পারে এবং উচ্চতা কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে এটি হাইস্টামুথনের কারণে নয়, বরং বয়সজনিত প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে হয়। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলি বয়সের সাথে ঘন এবং শক্ত হয়ে যায়, ফলে উচ্চতা কিছুটা কমে যায়।

৩. হৈস্থমুথন আপনার শরীরের কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে: হাইস্টামুথন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে মেরুদণ্ডের কঙ্কাল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু, এই অবস্থার ফলে উচ্চতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং, যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে হাইস্টামুথন বা কুঁজো হয়ে থাকে, তবে তাদের পিঠ, মেরুদণ্ড এবং কাঁধে ব্যথা হতে পারে এবং এরা কিছু শারীরিক সমস্যার শিকার হতে পারে, যেমন: সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারা বা পিঠের ব্যথা।

হৈস্থমুথন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

হাইস্টামুথন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ ও উপায় রয়েছে:

  1. সঠিক ভঙ্গি বা পোস্টচার বজায় রাখা: একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং বসুন। আপনার কাঁধগুলো পিছনে রাখুন এবং মাথাকে সোজা রাখুন। এটি আপনার মেরুদণ্ডকে সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে সাহায্য করবে।

  2. ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করলে মেরুদণ্ডের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তা সোজা রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, পিঠের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম মেরুদণ্ডের অ্যালাইনমেন্টে সাহায্য করতে পারে।

  3. প্রচুর জল পান করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস: হাড় এবং মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। এতে মেরুদণ্ডের হাড় শক্তিশালী থাকে।

  4. সক্রিয় জীবনযাপন: শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে। হাঁটাচলা, সাঁতার বা বাইক চালানো মেরুদণ্ডের শক্তি বাড়ায় এবং হাইস্টামুথন থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক।

কীভাবে বুঝবেন যে আপনি হাইস্টামুথন সমস্যায় আক্রান্ত?

হাইস্টামুথন খুব সাধারণ একটি সমস্যা, তবে এটি যদি দীর্ঘসময় স্থায়ী হয়ে যায়, তাহলে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আপনি যদি নিচের লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন, তবে এটি হতে পারে:

  • পিঠ, কাঁধ বা ঘাড়ে ব্যথা
  • সোজা হয়ে দাঁড়াতে অসুবিধা হওয়া
  • দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হওয়া
  • পিঠের মেরুদণ্ডের উপরের অংশে বা কুঁজো হয়ে যাওয়া

উপসংহার

হৈস্থমুথন বা মাথা নত করার কারণে উচ্চতা কমে যাওয়ার কোনো স্থায়ী প্রভাব নেই। এটি শুধুমাত্র সাময়িক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন মেরুদণ্ডে চাপ পড়লে শরীরের উচ্চতা সামান্য কমতে পারে। তবে, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং শারীরিক কার্যকলাপে সক্রিয় থাকা মেরুদণ্ডকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে, যা উচ্চতা ধরে রাখতে সহায়ক। দীর্ঘমেয়াদী হাইস্টামুথন থেকে মুক্তি পেতে সঠিক ব্যায়াম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন।

তাহলে, এই তথ্য দেখে এখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে হাইস্টামুথন আসলেই আপনার উচ্চতা কমিয়ে দেয় না, তবে এটি আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url