হৈস্থমুথন করলো কি বাচ্চা হওয়াতে সমস্যা হয়



হৈস্থমুথন করলো কি বাচ্চা হওয়াতে প্রবলেম হয়?

বর্তমানে অনেক নারীই সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুত হতে চান এবং একাধিক শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেন। তবে, অনেক সময় কিছু বিশেষ শারীরিক পরিস্থিতি বা অসুবিধা কারণে সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্ত পরিস্থিতির মধ্যে একটি হলো ‘হৈস্থমুথন’ (হিস্ট্রিওটমি) অথবা জরায়ু অপারেশন। এই বিষয়ে বিশেষভাবে জানতে চাওয়া হয়, “হৈস্থমুথন করলো কি বাচ্চা হওয়াতে প্রবলেম হয়?” তাই, এই আর্টিকেলে আমরা ঐ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।


Read more also: হৈস্থমুথন কি আসলেই কমিয়ে দেয় আপনার উচ্চতা? জানুন সত্য

হৈস্থমুথন কী?

হৈস্থমুথন একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া, যেখানে নারীর জরায়ু (উটেরাস) পুরোপুরি অপসারণ করা হয়। এটি এক ধরনের সার্জারি, যা জরায়ুতে টিউমার, ক্যান্সার, অথবা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে করা হয়। ঐ সময় জরায়ু অপসারণের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকরা এই অপারেশনটি করার সিদ্ধান্ত নেন।

হৈস্থমুথন সার্জারির পর নারীর আর সন্তান ধারণ করার সম্ভাবনা থাকে না, কারণ জরায়ু না থাকলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়।

READ MORE ALSO : ওজন বাড়ানোর জন্য দৈনিক কিসমিসের পরিমাণ: কতটি খাবেন


হৈস্থমুথন করানোর কারণগুলো কী কী?

হৈস্থমুথন করার কিছু প্রধান কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো:

  1. ক্যান্সার: জরায়ু, ওভারির ক্যান্সার বা জরায়ু গলার ক্যান্সার হলে অনেক সময় অপারেশন করা হয়।
  2. জরায়ুর টিউমার: ফাইব্রয়েড টিউমার বা অন্যান্য ধরনের টিউমার যা একে অপরকে আঘাত দিতে পারে বা বাড়তে থাকে।
  3. গর্ভধারণে সমস্যা: কিছু মহিলার যন্ত্রণাদায়ক বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে গর্ভধারণের চেষ্টা ফলপ্রসূ হয় না। এর মধ্যে জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
  4. জরায়ু সংক্রান্ত রোগ: জরায়ুর অবস্থা খুবই খারাপ বা মারাত্মক হলে তা অপসারণ করা হতে পারে।

হৈস্থমুথন পরবর্তী গর্ভধারণ: সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

হৈস্থমুথন সার্জারি করা হলে, নারীর গর্ভধারণের সুযোগ নেই কারণ জরায়ু অপসারিত হয়ে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে যেখানে শুধুমাত্র জরায়ু অপসারণ করা হয় না, তবে অন্যকিছু অংশ (যেমন ডিম্বাশয় বা টিউব) রাখা হতে পারে, সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গর্ভধারণের কিছু বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এটি বিশেষ করে যদি মহিলার ডিম্বাশয় সংরক্ষিত থাকে, তবে তাদের জন্য গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

1. সারোগেসি (Surrogacy):

সারোগেসি হলো এক ধরনের চিকিৎসা প্রক্রিয়া যেখানে অন্য কোনো নারী তার গর্ভে সন্তান ধারণ করেন এবং পরবর্তীতে সেই সন্তান মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যদি একজন নারী হিষ্ট্রেকটমি অপারেশন করিয়েও গর্ভধারণের চান, তবে সারোগেসির মাধ্যমে তারা সন্তান লাভ করতে পারেন।

2. ডোনার ডিম্বাণু (Egg Donor):

যদি নারীটির ডিম্বাশয়ও অপসারণ করা না হয়ে থাকে এবং তার ডিম্বাণু সংরক্ষিত থাকে তবে তিনি ডোনার ডিম্বাণু ব্যবহার করে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে, মহিলার শরীরে ডোনারের ডিম্বাণু প্রবেশ করানো হয় এবং যদি সফল হয়, তাহলে তিনি গর্ভধারণ করতে পারবেন।

হৈস্থমুথন পরবর্তী শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন

হৈস্থমুথন সার্জারি পরবর্তী নারীর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু নারীর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন: জরায়ু অপসারণের পর হরমোনের ভারসাম্যও পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গরমের অনুভূতি, মুড সুইং, উদ্বেগ ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।
  2. শারীরিক সমস্যা: হাঁটা বা অন্য দৈনন্দিন কাজ করার সময়ে কিছু নারীর পেটে ব্যথা বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  3. মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা: অনেকে মনে করেন যে, গর্ভধারণের ক্ষমতা হারানোর কারণে তারা আর পুরোপুরি নারী হিসেবে বিবেচিত নন। এটি মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের মা হওয়ার ইচ্ছা ছিল।
  4. প্রজনন ক্ষমতার অভাব: অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই সন্তান ধারণের সামর্থ্য হারানো এক প্রকার শোকের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বিকল্প পদ্ধতিতে একে মোকাবেলা করা সম্ভব।

প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান

যদি কোনও নারী হিষ্ট্রেকটমি সার্জারি করে থাকেন এবং গর্ভধারণের মাধ্যমে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে চান, তবে তা কিছুটা কঠিন হলেও সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে। সারোগেসি, ডোনার ডিম্বাণু, এবং IVF প্রযুক্তি এসব ক্ষেত্রে অন্যতম কার্যকরী সমাধান হতে পারে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, এই ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভধারণের প্রচেষ্টা চালানোর আগে নারীটির শরীরের সুস্থতা পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তার শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য সহায়ক।

শেষ কথা

হৈস্থমুথন বা জরায়ু অপসারণের ফলে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না, তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বিকল্প পদ্ধতিগুলি মাধ্যমে কিছু মহিলারা সন্তান ধারণে সফল হতে পারেন। যদি আপনি হিষ্ট্রেকটমি করান এবং গর্ভধারণের বিষয়ে প্রশ্ন থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এটি একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়, তাই প্রতিটি নারীর জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করার জন্য তাদের শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে, তাই হিষ্ট্রেকটমি পরবর্তী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগও আসছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url