বিয়ে করার জন্য কোন বয়সের মেয়ে বেশি উপযোগী?


বিয়ে করার জন্য কোন বয়সের মেয়ে বেশি উপযোগী?

বিয়ে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সিদ্ধান্তটি জীবনের গতিপথ অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয়। এক্ষেত্রে বয়স একটি বড় ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। অনেকেই মনে করেন, বিয়ের নির্দিষ্ট কোনো বয়স থাকা উচিত। কেউ বলেন ১৮ বছরই যথেষ্ট, আবার কেউ মনে করেন ২৫–৩০ এর মধ্যে হওয়া উচিত। তবে আসলে বিয়ে করার জন্য কোন বয়সটা মেয়েদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, সেটি নির্ভর করে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলোর ওপর।




১. আইনগত দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি একটি আইনগত সীমা, যার নিচে বিয়ে করলে সেটিকে বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই বিয়ে নিয়ে চিন্তা শুরু করার আগেই এই সীমাটি মাথায় রাখা জরুরি। তবে আইনি সীমা মানেই যে সেটিই সবচেয়ে উপযোগী বয়স, তা কিন্তু নয়।

২. শারীরিক প্রস্তুতি

শরীরিকভাবে একটি মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে প্রজননের উপযোগী হয়ে ওঠে। কিন্তু সেটি মানেই যে সে বিয়ের জন্য প্রস্তুত, তা নয়। ১৮ বছরের পর একজন মেয়ের শরীর ধীরে ধীরে পূর্ণতা লাভ করে। সাধারণভাবে ২০–২৫ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েরা পূর্ণ পরিপক্বতা লাভ করে। এই বয়সে সন্তান ধারণের দিক থেকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও কম থাকে। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনেক সময় ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যবর্তী সময়কে ‘শারীরিকভাবে আদর্শ সময়’ হিসেবে অভিহিত করেন।

৩. মানসিক পরিপক্বতা

বিয়ে কেবলমাত্র দুটি মানুষের একত্র বাস নয়; এটি একটি দায়িত্ব, একটি বোঝাপড়ার সম্পর্ক। মানসিকভাবে প্রস্তুত না হলে, এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী এবং সুখকর হওয়া কঠিন। অনেক মেয়ে ছোট বয়সে বিয়ের কারণে সংসার পরিচালনায় হিমশিম খায়, কারণ তাদের অভিজ্ঞতা, ধৈর্য বা সমস্যা মোকাবেলার ক্ষমতা তখনো গড়ে ওঠেনি।

মানসিকভাবে একজন মেয়ে সাধারণত ২২–৩০ বছরের মধ্যে অনেক পরিপক্ব হয়ে ওঠে। সে তখন নিজের চিন্তাভাবনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে, নিজের পছন্দ-অপছন্দ বোঝে এবং একটি সম্পর্ককে কীভাবে এগিয়ে নিতে হয় তা শেখে।

৪. শিক্ষাগত ও কর্মজীবনের প্রস্তুতি

আজকের যুগে মেয়েরা কেবল ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা শিক্ষিত হচ্ছে, চাকরি করছে, উদ্যোক্তা হচ্ছে। একজন মেয়ের জন্য শিক্ষাগত ও পেশাগত দিক থেকেও প্রস্তুতি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে একটি মেয়ে যদি অন্তত তার পড়ালেখা শেষ করতে পারে, তাহলে সে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে কর্মজীবন শুরু করতে পারলে তার নিজস্ব পরিচয় গড়ে ওঠে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন হয়, যা দাম্পত্য জীবনে একটি সুস্থ ভারসাম্য তৈরি করে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে ২৪–২৮ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করা অনেক মেয়ের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। কারণ এই বয়সে সে পড়ালেখা শেষ করে, নিজেকে চিনে ফেলে এবং দায়িত্ব নেওয়ার মতো মানসিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য অর্জন করে।

৫. পারিবারিক ও সামাজিক চাপ

আমাদের সমাজে এখনো অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের ২০–২২ বছরের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। পরিবার ভাবেন, মেয়ে বড় হয়ে গেলে বিয়ে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে বা সামাজিকভাবে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তবে এই ধারা এখন ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। অনেক পরিবারই এখন মেয়েদের উচ্চশিক্ষা এবং ক্যারিয়ারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তবে পারিবারিক চাপ এবং সামাজিক চিন্তাভাবনাগুলোর প্রভাব একজন মেয়ের উপর মানসিকভাবে পড়ে। এজন্য বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা এবং নিজের চিন্তাগুলো পরিষ্কারভাবে বলা জরুরি।

৬. সঠিক বয়স না, সঠিক প্রস্তুতি জরুরি

এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— "সঠিক বয়স" বলতে একক কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা যায় না। একজন মেয়ে ২২ বছর বয়সেই বিয়ের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত হতে পারে, আবার কেউ কেউ হয়তো ৩০ বছরেও প্রস্তুত না। তাই বয়সের সংখ্যার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত মেয়ের প্রস্তুতির উপর— সে কি মানসিকভাবে প্রস্তুত? সে কি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখে? সে কি নিজের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট?

৭. গবেষণার দৃষ্টিকোণ

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ২৫–৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেন, তাদের দাম্পত্য জীবন তুলনামূলক বেশি স্থিতিশীল হয়। কারণ তারা অনেক চিন্তাভাবনা করে, নিজের ক্যারিয়ার গড়তে সময় নেয়, এবং সম্পর্ক গঠনের দক্ষতা অর্জন করে। ফলে তাদের মধ্যে বোঝাপড়াও বেশি হয়।

৮. দাম্পত্য জীবনে সুখের চাবিকাঠি কী?

বয়স নয়, দাম্পত্য জীবনের সাফল্য নির্ভর করে বোঝাপড়া, সম্মান, ভালোবাসা ও পারস্পরিক সমঝোতার উপর। তবে বয়স যদি এই উপাদানগুলো গড়ে তোলার উপযোগী সময় হয়, তাহলে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একটি সম্পর্ক তখনই টেকে, যখন উভয় পক্ষ প্রস্তুত থাকে— মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ও আবেগগতভাবে।


উপসংহার

বিয়ে করার জন্য মেয়েদের নির্দিষ্ট বয়স বলতে আসলে কিছু নেই। বরং, এটি একটি ব্যাপক প্রস্তুতির বিষয়। আইনগতভাবে ১৮ হলেও, বাস্তবিকভাবে ২২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে করার সময়কেই অনেকে সবচেয়ে উপযোগী মনে করেন। এই বয়সে একজন মেয়ে সাধারণত জীবনের অনেক কিছু সম্পর্কে সচেতন হয়, দায়িত্ব নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি অর্জন করে, এবং নিজের চাহিদা ও সীমাবদ্ধতা বুঝে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।

সবশেষে, মেয়েদের উচিত নিজেদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া, সমাজের চাপ নয়। সঠিক সময় মানে সেই সময়, যখন সে নিজের ইচ্ছায়, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ও পরিপূর্ণ প্রস্তুতিতে নতুন জীবনে পা রাখতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url